জুলাই সনদ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া: বিএনপির বিপরীতে নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ছে জামায়াতসহ সাত দল
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে (১৯৭১) রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব ও জোটের রাজনীতি সবসময়ই আলোচনায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিতে পালাক্রমে সক্রিয় হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হয়। ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিটি দশকে জোটভিত্তিক রাজনীতি প্রধান ধারা হয়ে ওঠে।
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের আলোচনায় জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী সংস্কার, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR system), লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও দল নিষিদ্ধকরণ ইস্যু প্রধান হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্তত সাতটি রাজনৈতিক দল রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে। দলগুলো হলো:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
জামায়াতে ইসলামী
খেলাফতে মজলিস (দুটি অংশ)
নেজামে ইসলাম
খেলাফত আন্দোলন
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)
তাদের প্রধান দাবি:
জুলাই সনদের আলোকে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন
পিআর পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ
আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি
জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ
বিএনপি এই দাবিগুলোর সঙ্গে একমত নয়। দলটির মতে:
পিআর পদ্ধতির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়।
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হবে কি না, সেটা আইন-আদালতের বিষয়।
নির্বাচনী সংস্কার যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো জনগণের রায়ের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদে নির্ধারিত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন:
“আপনি যেটা চান, সেটা অন্য দলকে জোর করে করাতে পারবেন না। রাস্তায় নেমে চাপিয়ে দিতে চাইলে জনগণের ওপর আস্থার অভাব প্রমাণিত হয়। আমাদের এখন একটাই কর্মসূচি—নির্বাচন।”
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন:
“আমাদের আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়। আমরা জনগণের পক্ষে আন্দোলন করছি। আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই, আনুপাতিক ভোট চাই, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও বিবেচনায় আছে। সামনে আরও দল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।”
১. বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ – আন্দোলনকারীরা প্রকাশ্যে বিএনপির বিপরীতে অবস্থান না নিলেও কার্যত তারা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলছে। এতে বিএনপি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছে।
২. নির্বাচনের অনিশ্চয়তা – সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে নামায় নির্বাচন পেছানোর ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।
৩. ঐকমত্য কমিশনের গুরুত্ব – কমিশনের আলোচনায় সমাধান না আসায় আন্দোলনের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৪. জোট না হলেও সমন্বিত কর্মসূচি – দলগুলো আনুষ্ঠানিক জোট অস্বীকার করলেও তাদের একদিনে একই দাবিতে রাজপথে নামা কার্যত একটি অঘোষিত সমন্বয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। জামায়াতসহ সাত দলের আন্দোলন সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে হলেও এর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। নির্বাচনের আগে এ ধরনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন কেবল নির্বাচনকেই অনিশ্চিত করছে না, বরং ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
যুগান্তর পত্রিকা, রাজনৈতিক প্রতিবেদনের অংশবিশেষ
বাংলাদেশ প্রতিদিন আর্কাইভ (২০২৪–২০২৫)
উইকিপিডিয়া: July Charter, Aftermath of the July Revolution in Bangladesh
প্রতিবেদক:বিডিএস বুলবুল আহমেদ
আরও খবর জানতে ভিজিট করুন: বাংলাদেশ প্রতিদিন
ফজর | 3:50 AM ভোর |
---|---|
যোহর | 12:04 দুপুর |
আছর | 4:44 PM বিকাল |
মাগরিব | 6:50 PM সন্ধ্যা |
এশা | 8:17 PM রাত |
জুম্মা | 1.30 pm দুপুর |